বিএসটিআইতে পণ্যের মান নির্ধারণে হিমশিম !

0

গোলাম সরওয়ার : বিএসটিআইকে পণ্যের গুনগত মান পরীক্ষায় হিমশিম খেতে হচ্ছে । চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বিএসটিআইয়ের এই ল্যাবে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় ১৫৪ পন্যে মধ্যে পরীক্ষা হচ্ছে মাত্র ৬০টি পণ্যের। বাকী পণ্যের পরীক্ষা করতে হচ্ছে ঢাকায়। এ অবস্থায় পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রন নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বিএসটিআই।

দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে হওয়ায় প্রতিদিন বন্দরে খালাস হচ্ছে বিপুল পরিমাণ আমদানী করা পণ্য। জনবল সংকট ও আধুনিক ল্যব না থাকায় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রন হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।

পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনায় নিয়োজিত আছে বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এই অফিসের। বিশাল সীমানা ও কাজের পরিধি হলেও এই অফিসের অনুমোদিত লোকবল মাত্র ৭২ জন। তারমধ্যে শূন্যপদ আছে ২২টি। আর এতে হিমশিমের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে বিএসটিআইকে।

বিএসটিআইয়ের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক শওকত ওসমান বলেন, আমরা সীমিত জনবল নিয়ে দায়িত্ব পালনের আপ্রাণ চেষ্টা করছি। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া চলছে। নতুন জনবল পেলে কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। আমাদের অধীনে আরো দুটি অফিস হচ্ছে। এতে করে কিছু লোকবল পাওয়া যাবে আশা করছি।

জেলাভিত্তিক কার্যালয় না থাকায় পুরো বিভাগের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হয় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস থেকে। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা ও ৯৮টি উপজেলার মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এই অফিসের। তবে সম্প্রতি কুমিল্লায় একটি অফিস চালু করা হচ্ছে। তাছাড়া কক্সবাজারেও একটি জেলা অফিস চালুর প্রক্রিয়ায় আছে। অফিস দুটির জন্য নেই আলাদা কোন লোকবল। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের লোকবল দিয়েই জেলা অফিস দুটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে লোকবল সংখ্যা আরো কমবে। অন্যদিকে পুরো চট্টগ্রামের মাঠ পর্যায়ের মান নিয়ন্ত্রণে আছে মাত্র ৯ জন কর্মকর্তা। তাছাড়া নেই কোন ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কোন অভিযান পরিচালনা করা যায় না। মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিএসটিআইয়ের পরিদর্শক দলের অভিযান চললেও বাইরের জেলা-উপজেলাগুলো এ থেকে বঞ্চিত। ফলে সেখানে ভেজাল প্রতিরোধে নজরদারি নেই বললেই চলে।

শওকত ওসমান বলেন, আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এক সময় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি আসে। এখনো সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিবে।

ওজন পরিমাপ ও পণ্যের মান যাচাইয়ে প্রধানত কাজ করে বিএসটিআই। তালিকাভুক্ত ১৫৫টি পণ্যের মধ্যে মাত্র ৫৬টির মান পরীক্ষা করা যায় চট্টগ্রাম বিএসটিআইয়ের পরীক্ষাগারে। এর মধ্যে ১৩টি পণ্যের আংশিক পরীক্ষার সামর্থ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এরমধ্যেও লাইসেন্স পেতে নানা ঝামেলা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। আবার সঠিক নজরদারি না থাকায় লাইসেন্স নিলেও সেটা আর নবায়ন করে না অনেকে। সঠিক নজরদারি না থাকার জন্য জনবল সংকটকে দায়ী করেন বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বিএসটিআইয়ের জনবলের সংকট রয়েছে, এটি সত্য। তবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তরিকতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। টাকার লেনদেন ছাড়া বিএসটিআইয়ে কোন কাজ হয় না। এটা মানসিকতার সমস্যা। লোকবল ৫ জন থাকলে সপ্তাহে ৫টি এলাকা হলেও ভিজিট করা যায়। বাস্তবে তারা শুধু লেনদেনের তালে আছে, মানুষকে সেবা দেওয়ার তালে নেই। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে লোকবল বাড়িয়ে কোন লাভ নেই।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম ৫টি উইং নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে মেট্রোলজি উইংয়ে জনবল সংকট আছে ৯ জন। ১৮ জন জনবলের অনুমোদন থাকলেও এ উইংয়ে নিয়োজিত আছে মাত্র ৯ জন কর্মকর্তা। ক্যামিকাল উইংয়ে সংকট আছে ৩ জন। ৯ কর্মকর্তার বিপরীতে এ উইংয়ে নিয়োজিত আছে ৬ জন। এডম্যানিস্টেশনে সংকট ২ জন। ফিজিক্যাল ট্রেস্টিং উইংয়ে সংকট ৫ জন। এ উইংয়ে অনুমোদিত ১০ জনের বিপরীতে নিয়োজিত আছে ৫ জন। সিএম উইংয়ে সংকট ২ জন। অনুমোদিত ১৪ জনের বিপরীতে আছে ১২ জন কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে অনুমোদিত ৭২ জনের বিপরীতে সংকট আছে ২২ জন। তবে নতুন দুটি জেলা অফিস চালু হলে এ সংকট আরো ঘুনিভুত হবে।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (সিএম) মোস্তাক আহমদ বলেন, জনবল কাঠামোর অধীনে লোকবলের কিছুটা সংকট আছে। তাছাড়া এমনিতেই অনেক আগের জনবল কাঠামো। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আওতা ও পরিধি বেড়েছে। দুটি জেলা অফিসও হতে যাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে নতুন লোকবল নিয়োগ হয়নি। সময় উপযোগী লোকবল হলে কার্যক্রম আরো গতিশীলতা পাবে।

পণ্যের গুনগত মান ঠিক রেখে উৎপাদনকারীরা তা বাজারজাত করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে জনবল বাড়ানোর কথা বলেছেন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগেরও দাবী জানান। চট্টগ্রামে বিএসটিআইর আধুনিক ল্যব স্থাপিত হলে, ভোক্তাদের হাতে মানসম্মত পণ্য তুলে দেয়া সম্ভব বলে জানান কর্মকর্তারা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.