গোলাম সরওয়ার : গত ৭ মে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালা পাড়ার একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে মা নাসিমা আক্তার (৩৫) ও মেয়ে রিয়া আক্তারের (৮) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় নিহতের স্বামী শাহ আলম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নগরীর সদরঘাটের নালাপাড়ায় বহুতল ভবনের মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামী বেলাল ঠান্ডা মাথায় জাবাই করেন আপন খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী নাসিমা বেগম ও মেয়ে রিয়া আক্তার ফ্লাগুনীকে খুন করেও এতোদিন সে ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এমনকি গত ৭ মে হত্যাকাণ্ডের পর টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে গিয়ে নিজকে স্বাভাবিকও রাখেন তিনি।
গত ২৩ মে ১৯ সেকেন্ড একটি মোবাইল কলের সূত্র ধরেই উদঘাটিত হয় চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের রহস্য। একে একে আটক করা হয় বেলালের প্রেমিকা ফারজানা, তার ভাই রুবেল ও রুবেলের এক বন্ধুকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে পরিস্কার হয় এই জোড়া খুনের একমাত্র খুনী তাদেরই নিকট আত্মীয় শাহ আলমের খালাতো ভাই বেলাল।
‘মামলাটির তদন্তকালে বেলালসহ শাহ আলমের অনেক আত্মীয়ের সাথে একাধিকবার কথা বলে খুনী সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। বেলাল খুনের পর নাসিমার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনসেট টাকা ও স্বর্ণালংকারের সাথে নিয়ে যায় খুনী বেলাল। আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তদন্তে সহযোগিতার ভান করেছিল সে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ধরা পড়তেই হয়েছে।’ তবে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাতের ফোন পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে আসেন। এরপরই তাকে আগে থেকে আটক প্রেমিকা ফারাজানাসহ তিনজনের মুখোমুখি করা হয় এবং চাঞ্চল্যকর এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখনো হয়। রাতভর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে উদঘাটন করা হয় খুনের বিস্তারিত বর্ণনা। গোয়েন্দা পুলিশ ও খুনী বেলালের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খুনের বর্ণনা দিয়ে বেলাল বলেন গত বৈশাখের পর থেকে লক্ষীপুরের বাসিন্দা পোশাক কারখানার শ্রমিক ফারজানার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। আমার বাসার কাছাকাটি বাংলাবাজার এলাকায় ফারজানার বাসা হওয়ায় নিয়মিত কথা হতো, দেখা সাক্ষাত হতো। এমনকি দিনে ১৫ বার ২০ বারও কথা বলতে থাকি। বিশেষ করে তার ( ফারজানা) কাছ থেকে আমার প্রতি অন্যরকম চাপ ছিল। একপর্যায়ে তাকে আমিও ভালোবেসে ফেলি।
সেই থেকে তাকে নিয়ে ডেটিং করতে অনেক টাকার প্রয়োজন বোধ করি। আমি ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর কাজ করে যে ৭-৮ হাজার টাকা ইনকাম করি তাতে চট্টগ্রামে বাস করে পরিবারকে দিয়ে প্রেম করা সম্ভব হচ্ছিলনা। সেজন্য আমি বেশি করে টাকা ইনকামের পথ খুঁজতে থাকি।নিজের পরিবার সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ছয় বোনের এক ভাই।
আমার বড় দুই বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকী চারজন আমার ছোট। বাবা এলাকায় রিকশা চালায়। অভাবের তাড়নায় মাদ্রাসায় দুই ক্লাস পড়লেও কোন লেখাপড়া করতে পারিনি। গত আড়াই বছর আগে চট্টগ্রামে এসে খালাত ভাই শাহ আলমের বাসায় উঠি। সেখানে থেকে তার সাথে মাংসের দোকানে চাকরি করি। এখন আমার পরিবারের কি হবে সেটিও জানিান। মাতো অনেক আগে মারা গেছে।’
ডিবি তাকে নালাপাড়া থেকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও বেলাল বলছেন ভিন্ন কথা। এ প্রসঙ্গে বেলাল বলেন, ‘স্যাররা একে একে ফারজানা, তার ভাইসহ আরেকজনকে আটক করে নিয়ে আসে। বিষয়টি আমি জানতাম, চিন্তা করলাম বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকিনা কেন আমি আর বাঁচতে পারবো না। সেজন্য তানভীর স্যার যখন ফোন দিয়ে গতকাল বিকেলে এখানে আসতে বলেন-আমি কিছু চিন্তা না করেই চলে আসি। খুনের কথাও স্বীকার করি।’
এদিকে গ্রেপ্তারের পর খুনের দায় স্বীকার করে রাতে মহানগর হাকিম রহমত উল্লাহর আদালতে বেলাল হোসেন (১৯) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাজরের বাড়ী এলাকার রিকশা চালক মন মিয়ার পুত্র। পেশায় একজন টিউবয়েল মিস্ত্রী।