সীতাকুণ্ডে উচ্ছেদ আতঙ্কে হাজার হাজার গ্রামবাসী

0
কামরুল ইসলাম দুলু : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের খাদেমপাড়া গ্রামে উচ্ছেদ আংতকে হাজার হাজার নারী পুরুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শত শত বছর ধরে বাপ দাদার বসত ভিটায় বসবাস করে আসা কয়েক হাজার গ্রামবাসীর এখন তাদের সহায় সম্পত্তি হারিয়ে উচ্ছেদ আতঙ্কে পুরো এলাকাতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। নৌ বাহিনী কর্তৃক খাদেমপাড়ার বিশাল এলাকা অধিগ্রহণ করে এলাকাবাসীকে উচ্ছেদ করা হবে এমন ঘোষণার পর গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।ইতোমধ্যে উপজেলা অফিসার (ইউএনও) জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্থানীয় সাংসদ সদস্যকে স্বারকলিপি দিয়েছে গ্রামবাসী। এসব নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আর্কষণ করে বুধবার (৮ জানুয়ারী ) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্থানীয় ভাটিয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন নৌবাহিনী কর্তৃক খাদেমপাড়া গ্রাম অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রত্যারের দাবী জানিয়ে বলেন, সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ না নিলে এলাকাবাসী তাদের জীবন দিয়ে হলেও বাপ দাদার বসত ভিটা রক্ষা করবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নানা কারণে সীতাকুণ্ড মধ্যে ভাটিয়ারী ইউনিয়নে এমনিতেই সবচে বেশী মানুষের (প্রায় দুইলক্ষ পঞ্চাশ হাজার) বসবাস।
দেশের একমাত্র সামরিক প্রশিক্ষণ একাডেমী বি.এম.এ ও নৌবাহিনীর বি.এন.এস ভাটিয়ারী এই ইউনিয়নে অবস্থিত। এমন নজীর দেশের কোন ইউনিয়নে নেই। উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে সরকার বিভিন্ন সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করায় হ্রাস পেয়েছে মানুষের ফসলী জমি, কমেছে বসযোগ্য জমি। আবারও অধিগ্রহণ করা হলে সীতাকুণ্ডের  মানচিত্র হতে এই ইউনিয়নের অস্থিত্ব এবং খাদিমপাড়া গ্রামটি বিলুপ্তির আশংকা করছি। সরকার জনগণের জন্য। জনগণের শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। নৌবাহিনী আমাদের অহংকার। দেশ মাতৃকা রক্ষায় এই বাহিনীর ভূমিকার কথা কারো অজানা নয়।
কিন্তু নৌবাহিনীর অস্ত্রাগারের চারপাশে জনবসতি থাকা উভয়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তা আমরা স্বীকার করি। প্রশ্ন হছে কোনটা আগে? গ্রাম না নৌবাহিনীর অস্ত্রাগার? ঘন জনবসতিপূর্ণ গ্রাম বা লোকালয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার গড়ে তোলা কতটুকু যুক্তিসংগত? আমরা নৌবাহিনী ও সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি, ঘনবসতিপূর্ণ ও শিল্পসমৃদ্ধ এই এলাকা বাদ দিয়ে দেশের অন্য কোন স্থানে গড়ে তোলা হোক নৌবাহিনীর অস্ত্রাগার।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ইসহাক বলেন, আমাদের অবস্থা আজ ফিলিস্তিনীদের মত হয়েছে। আমারদের জায়গা-জমি আমাদের সম্পদ, আমাদের বাড়িঘর পুকুরের মাছ কোন কিছুই আজ আমাদের অধিকার নেই। স্বাধীন ভাবে এলাকায় পথ চলতে পারি না। নিজের বসতঘর মেরামত করতেও বাধা, সামাজিক কোন অনুষ্ঠান করতে হলে তাদের  নৌ-বাহিনী) কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এ কেমন দেশ! আমরা কি স্বাধীন দেশের নাগরিক না! কেন আমাদের বাপ দাদার বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ হবো। আমাদের কথা শুনার মত কেউ নেই।
আমি একজন সরকার দলীয় নেতা অথচ নিজেও আজ আসহায় আমরা কার কাছে যাবো। তিনি বলেন, নৌ বাহিনী তাদের অস্ত্রাগারের নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আমাদের উপর তাদের বিধি নিষেধ প্রয়োগ করছেন। অথচ তারা আমাদের জায়গা দখলে নিয়ে সে জায়গা দোকানঘর মার্কেট এবং বিনোদন কেন্দ্র চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা সরকারে কাছে এর প্রতিকার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসী ৪ দফা দাবী পেশ করেন। তা হলো-খাদিমপাড়া মৌজায় আর কোন ভূমি হুকুম দখল না করা। সরকারী আবিদশাহ সড়ক দিয়ে (কথিত নেভী সড়ক) যানবাহনসহ জনগণের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা।  নৌবাহিনীর লোকজন কর্তৃক গ্রামের জনসাধারণের ভূমিতে প্রবেশ করে গ্রামবাসীর বাড়ীঘর নির্মাণে কোন ধরণের বাধা বা বেআইনি খবরদারী না করা এবং খাদিমপাড়ার মতো একটি আবাসিক ও শিল্প এলাকা থেকে নৌবাহিনীর অস্ত্রাগারটি নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নেয়া জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.