আরকানে ফের সহিংসতা, বিজিবির টহল জোরদার

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার) :: সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতিনিয়ত সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মুসলমান উচ্ছেদ করে সেনাবাহিনী মুক্ত অঙ্গরাজ্যের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে আরকান রাজ্যের রাখাইন স¤প্রদায়। তবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দাবী রাখাইনরা যে বিক্ষোভ করেছে তার প্রতি সরকারের মৌন সমর্থন রয়েছে।

গত ৩/৪ দিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তে রাখাইন রাজ্যে ফের শুরু হয়েছে ধর পাকড় ও সরকারী সেনাবাহিনীর অভিযান। ফলে রোহিঙ্গারা আবারো বাংলাদেশে চলে আসছে। কথা হয়েছে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া আমির হাকিম (৩৪), কালা মিয়া মিয়া (চিংদং, বুচিদং), ছারা খাতুন (৫০), দেলোয়ার বেগম (২৮), আবদুর রহিম (৩৬), মংডু থানার নাইত ডেইল পাড়া গ্রাম থেকে চলে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে মংডুর আরকান রাজ্যের সিটওয়ে আইশ চর, কোয়ার বিল, কিয়ারি পাড়া, রাসিডং ও বুচিডং এবং তামিল থেকে পুরুষরা চলে আসছেন। গত ৪ দিনের বালুখালী বস্তিতে শতাধিক ও কুতুপালং বস্তিতে সাড়ে ৩ শতাধিক নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে বালুখালী বস্তির লালু মাঝি ও কুতুপালং বস্তির সেক্রেটারী মোঃ নুর জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার বখতিয়ার আহমদ নতুন করে চলে আসা রোহিঙ্গাদের কথা স্বীকার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গা আসার খবর এপাড় বাংলার সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনী অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার ও নজরদারী বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবির ধারণা, মিয়ানমার সরকার সেদেশের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা জোরদার করায় সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে থাকতে পারে। গত ৩ দিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির এ সতর্ক নজরদারী চলছে বলে জানান বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এস এম আরিফুল ইসলাম ও কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান।

বিজিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকার বিষয়টি ধরে নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির এ সতর্কতামূলক নজরদারী ও টহল জোরদার করা হয়েছে। লে. কর্ণেল আরিফুল বলেন, “মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তের রাখাইন প্রদেশের (আরাকান প্রদেশ) আকিয়াব জেলার মংডু, বুচিডং ও রাচিডংসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গত কিছুদিন ধরে সেনা সমাবেশ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা ঠেকাতে আমরাও বিজিবির ফোর্স বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্তে নিরবিচ্ছিন্ন টহল জোরদার করেছি। “ সেনা উপস্থিতির কারণে সেদেশের রোহিঙ্গাদের দলে দলে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশংকা থাকে।
এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার পাশাপাশি সেদেশের যে কোন অপরাধী যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে আমরা এ বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছি মাত্র। ” তবে এ নিয়ে আপাতত আতংতিক হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেদেশের সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়ে আরিফুল বলেন, “ সীমান্তের ওপারে খবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি, তারা সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মূলত সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য। তাদের টার্গেট সাধারণ রোহিঙ্গারা নয় ; অপরাধ সংঘটনকারি সন্ত্রাসীরা।

এ নিয়ে সা¤প্রতিক সময়ে একটি প্লেনে করে ৫ শতাধিক সেনার একটি দল সিটুয়ে এসেছে এবং আশপাশের অন্য অঞ্চল থেকে সেনা সদস্যদের মোতায়েনের তথ্যের কথাও জানান তিনি।একই তথ্য ও কথা জানালেন বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খানও।

তিনি বলেন, “ মিয়ানমার সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটনানোর বিষয়টি বিজিবির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে আমরাও সীমান্তে ফোর্সের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন টহল জোরদার এবং সতর্কতা বাড়িয়েছি। ” গত ৩ দিন ধরে সীমান্তে বিজিবির এ অতিরিক্ত সতর্কতা চলছে বলে জানান মঞ্জুরুল হাসান খান। তবে মিয়ানমারে সেনা সমাবেশের কারণে এ মূহুর্তে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোন ধরণের ঘটনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “ দু’য়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাঝে-মধ্যে ঘটলেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক দিয়েছি। ”তারপরও যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা থেকে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছেন বলে জানান জানান মঞ্জুরুল হাসান খান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.