এস কে সিনহার ভাবশিষ্যরা এখনো বহাল তবিয়তে

0

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী : এস কে সিনহার ভাবশিষ্যরা এখনো বহাল তবিয়তে। নানা অঘটনে সমালোচিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অতি সম্প্রতি বই লিখে সরকার বিরোধীতায় আলোচনায় এলে চট্টগ্রামের এক বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগে তোলেন । কর্মস্থলে ন্যায্য বিচার না পাওয়ার এই অভিযোগ তোলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান।

তিনি তাঁর নিজের অসুস্থতা, বাবার মৃত্যু ও শ্বশুরের দুরারোগ্য ব্যাধিকালিন সময়ে প্রশাসনিক অভিভাবক হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেও একটি মিথ্যে অভিযোগ বিষয়ে সুবিচার না পাওয়ায় অসন্তুষ্টি জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।

চট্টগ্রামের এই বিচারকের এমন অভিযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হলে পাল্টা দেন খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এডভোকেট কুমার দেবুল দে ।

যেই মুহূর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে এস কে সিনহার বক্তব্যকে মিথ্যে বলে দাবি করছেন ঠিক সেই মুহূর্তে খোদ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এডভোকেট কুমার দেবুল দে’র এই বক্তব্য প্রশ্নের উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এটিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি,রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তিকর প্রশ্ন তোলা সাবেক প্রধান বিচারপতির পক্ষেরই অবস্থান বলে মনে হয়।

চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচারকাজে আলোচনায় আসা চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান সাবেক প্রধান বিচারপতিকে তাঁর দায়িত্ব পালন কালে অধীনস্থদের প্রতি একচোখা নীতি অবলম্বনের অভিযোগ আনেন।বিচার বিভাগকে আর রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানোর জন্যও অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।

মাহবুবুর রহমান বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজ পদ মর্যাদায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের আইন কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের কাছে আস্থা তৈরি করে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দ্রুত ও রেকর্ড সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করেও প্রশংসিত হন । চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিকেল হতে রাত গড়িয়ে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত

স্মরণকালের সবচে দীর্ঘ জবানবন্দিও নেন তিনি । এনএসআই পরিচালক সাহাবুদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে নেয়া এই জবানবন্দিটি ছিল চাঞ্চল্যকর দশট্রাক অস্ত্র চোরা চালান মামলার টার্নিং পয়েন্ট। এছাড়া ঘন্টা হিসেবে রিমান্ডে নেয়া, প্রচলিত আইনেই ইভটিজিংয়ের সাজা প্রদানের নজির সৃষ্টি করেও আলোচিত হন মাহবুবুর রহমান।

কিন্তু তিনি তাঁর পিতার যখন মৃত্যু শয্যা, তখন উর্ধতন এক কর্তার মিথ্যে অভিযোগের বিষয়ে বিষয়ে বিচার চাইতে গেলে সাবেক প্রধান বিচারপতি তাঁর প্রতি সুবিচার করেননি উল্লেখ করে খোদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।

এতে বিচারক মাহবুবুর রহমান নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধান বিচারপতির বই লেখার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলে বলেন,”আপনার উদ্দেশ্য আসলে কী?নির্বাচনের আগে এই বই লেখার উদ্দেশ্য কী?এটা একটা খেলা।খেলোয়াড়গণ সুনির্দিষ্ট।রেফারিও আছে।বিচার বিভাগকে কেন জড়াচ্ছেন?আপনি সাবেক মাননীয় প্রধান বিচারপতি হলেও আপনার বক্তব্যের ঢেউ রাজনৈতিক স্রোতধারায় গিয়ে পড়বে। দয়া করে বিচার বিভাগকে আর রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াবেন না। ”

সাবেক প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্য করে বিচারক মাহবুবুর রহমান আরো বলেন,”যিনি আজ আইনের শাসন,মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলছেন,তাঁর কাছেই আমার মানবাধিকার ভূ-লুণ্ঠিত হয়। বদদোয়া দেয়া আল্লাহ্’র রসুলের(স:)সুন্নতের খেলাফ। না হয় আপনাকে অভিশাপই দিতাম। আমি না দিলেও কারো না কারো না অভিশাপ তো লেগেছে। না হয় স্বপ্ন ভাঙ্গবে কেন? সবাই জানে -মংগলের উদ্দেশ্যে যে স্বপ্ন দেখা হয় সে স্বপ্ন কখনো ভাঙ্গে না। আপনার স্বপ্নের উদ্দেশ্য কী ছিল তা কেবল আপনি জানেন আর যাঁদের নিয়ে সংসার করেছেন হয়তো তাঁরাই জানেন। ”

অন্যদিকে, এডভোকেট কুমার দেবুল দে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিচারক মাহবুবুর রহমানের অবস্থানকে”স্পষ্টত বিচারিক শিষ্টাচারের লংঘন” বলে অভিযোগ তুলেছেন।

এডভোকেট কুমার দেবুল দে ফেসবুকে লিখেছেন,”জুড়িশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত একজন বিচারক কিভাবে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে কটু মন্তব্য করতে পারে? ছুড়ে দিতে পারে চ্যালেঞ্জ? ”

তিনি এও লিখেছেন,”আমরা লিখতে পারি কারন আমাদের লিখার অধিকার আছে যা আপনার নাই। হে বিচারক মাহবুবুর রহমান আপনি সার্ভিসে থেকে তা পারেন না। এইসব অতি উতসাহী বিচারকদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। এদের কারনে নিম্ন আদালতের বিচার ব্যবস্থা ধ্বসে পড়তে পারে, শৃংখলা নষ্ট হতে সার্ভিসের। এবং এইটা স্পষ্টত বিচারিক শিষ্টাচারের লংঘন।”

কিন্তু যেখানে কেউ একজন প্রধান বিচারপতি তাঁর কর্মকালের গোপনীয়তার শপথ ভঙ্গ করে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বদলে বই লিখে সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন , সেখানে তাঁর (সাবেক প্রধান বিচারপতির) কর্মকালিন সময়ে ন্যায্য বিচার না পাওয়ার বেদনা ও অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরার মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার একজন কর্মরত বিচারকের থাকতেই পারে ।

বরং দলীয় অবস্থানের সাথে সংহতির বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপকমিটির এই সদস্যের এমন বক্তব্য দলীয় শৃঙ্খলা প্রশ্নেও সংশয় তৈরি করতে পারে ।

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপকমিটির এই সদস্যের এমন বক্তব্য মূলতঃ কে বা কাদের সন্তুষ্ট করতে করা হয়েছে বা এস কে সিনহার সাথে এই উপকমিটির সদস্যের সম্পর্কের গভীরতা কিরূপ তাও বিবেচনার দাবী রাখে । তবে কী শর্ষের ভেতরে এখনো ভূত আছে ? আমাদের আস্থার সর্বোচ্চ ঠিকানা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী কিংবা তাঁর নেতৃত্বধীন সরকার অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টাকারীদের কাছ থেকে নিরাপদ হতে পেরেছে তো ? নাকী সূর্যের আড়ালে হাসছে অজানা অন্ধকারের অক্টোপাস ?

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী : আহবায়ক, চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যেগ ও সহসভাপতি, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.