অপ্রতিরোধ্য তারুন্য রিয়াজ হায়দার চৌধুরী
জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটি নিউজ :: আমার অনেক সহকর্মীর মতো একজন রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। নব্বই দশকের প্রথমে এসেছিলেন ছড়া নিয়ে আমার কাছে। ছড়া বা কবিতা না ছাপিয়ে আজকের সুর্যোদয়ে শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ করতে বললে রিয়াজ সম্মতি দিলেন। এর পর তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি।
এ্যাসাইনমেন্ট কভার করতে তাকে সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করলেও সাপ্তাহে অন্তত ৫-৬ দিন মাঠে কাজ করতে হতো। সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহে তার মধ্যে ছিল দারুন ইচ্ছাশক্তি। মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে রিয়াজ হায়দার সাহসী ও সংবেদনশীল মানুষ। সত্য, সুন্দর ও সফল পথের যাত্রী ছিলেন আমার তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪ বছর।
আমার এখানে রাজনীতি, সাক্ষাৎকার, অর্থনীতি, অপরাধ ও সংস্কৃতি সহ সবকটি বিষয়ে লিখেছেন। আজকের সুর্যোদয় থেকে বের হয়ে দৈনিক খবর, দৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা, দৈনিক রূপালী, দৈনিক পুর্বকোণ, একুশে টেলিভিশন, এসটিভি ইউএস, যমুনা টিভি হয়ে সর্বশেষ বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ-টুয়েণ্টফোর চ্যানেলের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক ফিচার, নিউজ বা হালহকিকত প্রায় প্রতিদিন তুলে ধরেন পত্রিকার পাতায় ও টেলিভিশনের পর্দায়। স্থানীয় পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ও খুঁটিনাটি নিউজ নিয়ে নিউজ-২৪ চ্যানেলের প্রতিদিনের সকালের সংবাদ বিশ্লেষন প্রোগ্রামটি উপস্থাপনা করেন তিনি। সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের একেক করে স্টুডিওতে এনে তাদের মতামতকে দর্শক স্রোতাদের সামনে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে প্রথম রিয়াজ হায়দার চৌধুরী চালু করেন, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবেও চট্টগ্রামে পেশাজীবি অঙ্গনে স্বাক্ষর রেখেছেন।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন একটি বইয়ের ভুমিকায় রিয়াজ হায়দার চৌধুরী প্রসঙ্গে লিখেছেন, খুব অল্প বয়সে মেধা, মননে ও অত্যাধিক শ্রমের বিনিময়ে খ্যাতির ব্যাপ্তির প্রসার ঘটায় প্রভাবশালী ও সহযোদ্ধা অনেকের হিংসা-বিদ্বেষ তার(রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর) প্রাপ্তীর খাতায় জমা হয়েছে। নানা বাধা, প্রতিকূলতা, চক্রান্তে তাকে কর্মজীবনের পথচলায় পথভ্রষ্ট করার অপচেষ্টা করেছে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নে (সিইউজে) সর্বকনিষ্ট সাধারন সম্পাদক হিসেবে (২০০৬-২০০৮),(২০১২-২০১৪) ও সভাপতি(২০১৬-২০১৮) হিসেবে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সফলভাবেই দায়েত্বে ছিলেন। একাধিকবার সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। সাংবাদিকদের রুটি-রুজির সংগ্রামে ও ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে তার অনেক অবদান রয়েছে। তার পিতা ছিলেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা। যিনি না হলে জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিতে পারতেন না। সে প্রিয় পিতা পৃথিবীতে না থাকলেও নিজের সন্তানকে আঁকড়ে ধরেছেন মা নূর আকতার বেগম।
’৯০ দশকের আমার অনেক সহকর্মীদের মধ্যে ফটো সাংবাদিক গোলাম ফারুক, কাঞ্চন বড়ুয়া, কাজী ফজলুল আজীজ, মিলি সুলতানা, আয়ুবা হোসনা, খোরশেদ আলম, কাজী মহসিন, আশরাফ আহমেদ, নাসির উদ্দিন তোতা, আহমেদ রহিম, ময়না, মোতালেব সহ প্রমুখ ছিলেন। আমার সহকর্মীদের মধ্যে প্রত্যেকে আল্লাহর রহমতে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্টিত। এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। কেউ কৃতজ্ঞতা জানালো কিনা, সেটা আমি কখনো ভাবি না। তবে যারা আমাকে ছেড়ে এখন অন্যত্র জীবন ও জীবিকা অর্জনে জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন তাদের খোঁজ খবর রাখা ও পাশে থাকার চেষ্টা করে থাকি। এখনো আমার সাথে দিলীপ তালুকদার, গোলাম শরীফ টিটু ও গোলাম সরওয়ার কাজ করছেন।
আজকের সুর্যোদয় গ্রুপ থেকে আপনজন ও সোনারতরী নামে আরও ২টি ম্যাগাজিন পাক্ষিক হিসাবে প্রকাশিত হত। রিয়াজ আপনজন ও সোনারতরী ম্যাগাজিনে সংস্কৃতি ও অপরাধ বিয়য়ে ফিচার লিখেছেন। সাংবাদিকতার প্রথম থেকে তারুণ্যের এক মিলিট্যান্ট যোদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতণায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করেছেন খুব আন্তরিক ভাবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, আতাউর রহমান খান কায়সার, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইসহাক মিয়া, কফিল উদ্দিন, এম.এ মান্নান, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সহ অনেক আন্চলিক ও জাতীয় শীর্ষ নেতৃবর্গের সাক্ষাৎকার ও তাৎপর্যপুর্ণ বেশকিছু পলিটিক্যাল রিপোর্ট করেছেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নির্বাচনী ইশতেহার লিখেও তিনি আলোচিত । অনেক রাজনীতিবিদ, লেখক, কবি ও সাংবাদিকের আঞ্চলিক ও জাতীয় স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও তিনি কাজ করেছেন ।
আমার এই শিষ্য সাংবাদিক ইউনিয়নের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সফর সঙ্গী হয়েছেন। ইরানে আন্তর্জাতিক ন্যাম সস্মেলনে যোগ দেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে নেতৃবৃন্দদের সাথে দফায় দফায় বিদেশ সফর করেছেন।তরুন এই পেশাজীবি নেতা দেশে বিদেশে অন্তত শতাধিক কর্মশালা ও সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। সফর করেছেন জাপান, মালয়েশিয়া, থাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে।
রিয়াজ হায়দার উদার মনের ও সাংস্কৃতিমনা মানুষ। শৈশবকাল থেকেই সাংস্কৃতি চর্চায় জড়িত রিয়াজ। চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ বাকলিয়ায় কিশোরকালে নিজে গড়েছেন বঙ্গ সাংস্কৃতিক গোষ্টী। এ ছাড়াও ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড, সাংস্কৃতিক সংগঠন ত্রিতরঙ্গ সহ বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রামের সবকটি মাঠ ও মঞ্চে তার বক্তৃতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে পেশাজীবিদের সংগঠন পেশাজীবি সমন্বয় পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবে মাঠে রয়েছেন। চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহবায়ক ও আবৃত্তি সংগঠন তারুন্যের উচ্ছ্বাসের উপদেষ্ঠা ওচট্টগ্রাম প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগনে জড়িত তিনি।
’বঙ্গজ’ ও ’ভাষার লড়াই’ সহ নানা পত্রিকা ও গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রগতিশীল রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ছোট থেকে রিয়াজ হায়দার বড় হয়েছেন।একজন সক্রিয় গনমাধ্যম কর্মী হিসেবে বলব, সাংবাদিকদের আপদে-বিপদে, সুখে-দু:খে পাশে থাকার চেষ্টা তার যে নিরন্তর এক নেশায় পরিণত হয়েছে। রাত দুপুরেও সহকর্মী স্বরূপ ভট্টাচার্য্যের অসুস্থ পিতা ও সাংবাদিক স.ম ইব্রাহীমকে দেখে বাসায় ফেরার পথে সেদিন তিনি দুবৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছিলেন।
অনেকদিন দেশে ও ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। ’৯০ দশকের শুরুতে যে রিয়াজ হায়দার সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন তিনি এখন অনেক দুর এগিয়ে গেছেন।অন্যায়কে কখনো রিয়াজ হায়দার প্রশ্রয় দেননি। নির্ভীক সাংবাদিকতার তারুন্যের অহঙ্কার রিয়াজ হায়দার নীতি ও আদর্শকে কখনো বেচাকেনা করেননি। তাকে বার বার প্রভাবশালী মহল দাবিয়ে রাখার বা উপরে উঠার পথকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে জীবননাশের চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহ সব সময় সত্যের ও ন্যায়ের পথযাত্রীকে তার রহমত দিয়ে রক্ষা করেন।
সাংবাদিক নেতৃত্বের বাইরেও পেশাজীবি নেতা হিসেবে রিয়াজ হায়দার শুধু চট্টগ্রামেই নয় সারাদেশেই পরিচিত মুখ। আর এ কারনেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পেশাজীবি কোটা থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রাপ্তীর বিষয়ে তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনাও।
তরুন নেতৃবৃন্দকে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ধারায় জাতীয় নেতৃত্বের সুযোগ দিয়েছেন সেই প্রক্রিয়ায় রিয়াজও বেশ সম্ভাবনাময়। আর এ কারনে সুবিধাভোগী ভুমিদস্যু, রাজনীতিক ও অপেশাধার সাংবাদিক ও হাইব্রীড় নেতৃত্বের আতঙ্কের আর ঈর্ষার কারন তিনি। দেশ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলরা ইতিমধ্যে প্রগতির সংগ্রামী বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইফতেখার চৌধুরী ও রিয়াজ হায়দার চৌধুরীকে প্রানণাশের হুমকি দিয়েছে উড়োচিঠিতে। ইর্ষান্বিত মহলের গাত্রদাহ ও চক্রান্ত তাকে তার নান্দনিক ও সত্যের পথ থেকে কখনো বিচ্যুতি ঘটাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
ট্রেড ইউনিয়ন করতে গিয়ে বার বার প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়েছেন। প্রতিপক্ষ চেয়েছেন শুধুমাত্র তার উত্থান ও কর্মদক্ষতাকে ব্যাপহত করতে। কষ্টসহিষ্নু , ধয্যশীল ও সৎ একজন সাংবাদিক হয়ে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছেন।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনের একমাস পুর্বে জামালখানে দুবৃত্তদের হামলায় আহত হন। আগেও আক্রন্ত হয়েছেন দুই বার। তারপরও তিনি থেমে থাকেন নি। সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষন, অধিকার আদায়ে ও সাংবাদিকদের কল্যানে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
সাংবাদিকদের যে কোন সঙ্কটে, সমস্যায় ও বিপদে পাশে থাকাটা রিয়াজ হায়দারের বড় বৈশিষ্ট্য। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময়ধরে সাংবাদিকতার পথযাত্রায় সামাজিক অনেক কর্মকান্ডেও তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এই ব্রতকে সামনে রেখে এখন প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে তার সরব উপস্থিতি জানান দেয়। রিয়াজ হায়দার একজন মুক্তচিন্তার মানুষ। কোন গোঁড়ামী, হিংসা-বিদ্বেষ তার মধ্যে কাজ করে না। সাংবাদিকদের আস্থা ও ভরসার, শ্রদ্ধা ও স্নেহ মমতার বন্ধন রিয়াজ হায়দার এগিয়ে যাবেন আগামীতেও।
চট্টগ্রামের নেতৃত্বের সাফল্যের পলক নিয়ে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর সহ-সভাপতি পদে এবার লড়বেন রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। কর্মসততা- অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ববোধ তাকে সকল বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে সাফল্যের পথে এদিয়ে নেবে বলেই আমার বিশ্বাস। সাংবাদিকরাও তাদের সকল সুখ-দু:খের যাত্রী হিসাবে এই সহযোদ্ধাকে পাবেন- সব সময় এই আশাবাদ আমি ব্যক্ত করতে পারি।