সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধিঃ ছোট-খাটো ছিমচাম শরীর; অথচ শিক্ষা ও মনে অনেক বড় পটিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোফরান রানা। ব্যতিক্রমী এ জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে একজনের মন্তব্য “রাতের নিস্তব্দতায় সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চারদিকে কোথায়ও কোন সাড়া শব্দ নেই। কিন্তু হঠাৎ কানে ভেসে আসছে ঘরের দরজার সামনে কারো পায়ের শব্দ। ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম। কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না। তবে সাদা প্ল্যাস্টিকের একটা ব্যাগ চোখে পড়লো। বস্তা খুলে দেখি খাদ্যসামগ্রী। মনের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেল।
এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন পটিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
এমন আরেকজন বলেন, সবাই ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলতে চায়। এবার প্রথম ত্রাণ পেলাম। তাও ঘরের দরজার সামনে। এভাবে সবাই যদি রাতে ত্রাণ দিতো, তাহলে আমার মতো মধ্যবিত্তের অনেক উপকার হতো।
মানুষের খোঁজখবর নিতে ছুটে চলেছেন কাউন্সিলর গোফরান রানা। মানুষকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলতে এবং সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতেই তার এমন উদ্যোগ।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর গোফরান রানা জানান, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা প্রতিরোধে গত ২৬শে মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর আমার ওয়ার্ডে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তার ওপর লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন অসহায় মানুষগুলোর ঘরে ক্রমান্বয়ে খাবার সংকট দেখা দেয়।
আমি গোপনে দিনের বেলা সেই সব মানুষের তালিকা করি। এবং সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তালিকা অনুয়াযী আমার লোকজনকে সাথে নিয়ে যার যার ঘরের দরজার সামনে খাদ্য সামগ্রীর ব্যাগ রেখে আসি। কারণ খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের সময় কাউকে যাতে সংকোচে বা লজ্জায় পড়তে না হয়।
এছাড়া সামাজিক দুরুত্ব বজার রাখারও একটা বিষয় থাকে। তাছাড়া এলাকার স্বনামধন্য পরিবার এস আলম মাসুদ সাহেবের দানকৃত টাকা ওয়ার্ডের ৬০০ পরিবারকে রাতে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। এলাকার এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ আলহাজ্ব সামশুল হক চৌধুরী বলেছেন, পটিয়ার কোন মানুষ উপোষ থাকবেনা। তার নির্দেশ মত প্রতিটি অভাবী মানুষের তালিকা করে হুইপ মহোদয়ের ব্যক্তিগত তহবিলের ত্রাণ তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। এই ওয়ার্ডে ত্রাণের প্রয়োজন এমন কেউ বাদ যায়নি।
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে অনেক পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। এরমধ্যে ছিল চাল, ডাল, আটা, তেল, পিয়াজ, আলু। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগও অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
পটিয়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু সৈয়দও এলাকার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন। সেখানকার লোকজনও জানিয়েছে তাদের কাউন্সিলর ঘরে ঘরে গিয়ে এই দূর্যোগে মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছে এবং সাহায্য করছে। আবু সৈয়দ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে, কারো সাহায্যের প্রয়োজন অথচ সাহায্য পাননি পটিয়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড এমন কেউ থাকলে আমাকে তথ্য দিন। আমি পৌঁছে দিব।