বাঁশখালীর বৈলছড়িতে হাতি হত্যা-দাঁতসহ বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

0

 বাঁশখালী প্রতিনিধঃ বাঁশখালীর বৈলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব বৈলছড়ি পাথারয্যা ঘোনা পাহাড়ে হাতি হত্যা করে গোপনে পুঁতে ফেলা হাতির লাশটি উত্তোলন করে বনবিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পোষ্টমর্টেম করা হয়েছে ।

রবিবার পোষ্টমরেটম করাকালে পুঁতে ফেলা হাতিটির একটি দাঁত নেই এবং একটির অবশিষ্ট অংশসহ কিছু প্রয়োজনীয় হাঁড় গোড় নেই বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া জানান ।

যার ফলে দীর্ঘদিন যাবত বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় সংঘবদ্ধ চক্র পাহাড়ে হাতি নিধনের যে অভিযোগ তা আরো তীব্র হলো ।

জানা যায়, বাঁশখালীর বৈলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ববৈলছড়ির পাথায্রা ঘোনা পাহাড়ে গোপনে পুতে ফেলা হাতির গত ১৩ জুন সন্ধান পাওয়া গেছে। পুতে ফেলা হাতির গন্ধে এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিনের কাছে অভিযোগ করলে তিনি বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেন।

এরই প্রেক্ষিতে বাঁশখালীর কর্মরত একদল সাংবাদিক বৈলছড়ি ইউনিয়নের অভ্যারখীল পাহাড়ি এলাকায় পুতে ফেলা হাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় কালীপুর রেঞ্জের আওতাধীন সাধনপুর বনবিট কর্মকর্তা জলিলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৈলছড়ি ইউনিয়নের অভ্যারখীল পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতভিটা। এছাড়া পাহাড়ের জায়গা খন্ড খন্ড করে গড়ে তোলা হয়েছে নানা প্রজাতির ফসলি ক্ষেত। বিগত ১০-১২ দিন আগে স্থানীয় কিছু লোক বাগানে বিদ্যুৎ এবং বিষাক্ত কাঠাল খাওয়ানোর পর হাতির মৃত্যু হলে বনবিভাগকে না জানিয়ে অভ্যারখীল এলাকার জনৈক আবদুল আলিমের জায়গায় হাতিটিকে পুতে ফেলা হয়। হাতি পুতে রাখা স্থান থেকে ১শ গজের মধ্যে রয়েছে একটি সেমিপাকা বাড়ী। বাড়ীর লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, কয়েকদিন আগে ঐ এলাকায় শতাধিক লোক দেখা গেছে। এর বেশী কিছু জানাতে তারা অস্বীকৃতি জানান।

ওই পুতে ফেলা স্থান থেকে প্রচন্ড গন্ধ বের হলে স্থানীয় জনগণ চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিনকে অবহিত করলে তিনি বনবিভাগ ও প্রশাসনকে এ ঘটনা অবহিত করেন।

খবর পেয়ে বাঁশখালীতে কর্মরত সাংবাদিকরা ওই হাতি পুতে ফেলার ঘটনাস্থলে গিয়ে সরজমিনে প্রত্যক্ষ করেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত হন।

এ ব্যাপারে বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, স্থানীয় জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে চৌকিদার দফাদারকে প্রেরণ করে হাতি পুতে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বন বিভাগ এবং প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এই পাহাড়ি এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে যারা হাতিকে নানা ভাবে হত্যা করে হাতির মূল্যবান অংশ ও দাঁত বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে সাধনপুর রেঞ্জের সাধনপুর বনবিট কর্মকর্তা জলিলুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় জনগণের খবরের ভিত্তিতে এসে হাতিকে মেরে মাটিতে পুতে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও ঘটনাটি ১০-১২ দিন আগের। যারা এই হাতি হত্যা এবং আমাদেরকে না জানিয়ে অগোচরে মাটি চাপা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। তবে মাটি থেকে তোলার পর হাতিটির বিভিন্ন অংশ না থাকার ব্যাপারে কোন ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেননি তিনি।

বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া ও প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা: সবুজ কান্তি নাথ ও ডা: শুভ কান্তি দাশের সমন্বয়ে পোষ্টমার্ডাম করা হয় । এ সময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, এ ধরনের প্রতিনিয়ত হাতির মৃত্যুর ঘটনা বাঁশখালীর আগে অন্য কোথাও দেখেনি । কি কারনে হাতি গুলো বার বার মারা যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

হাতির পোষ্টমর্টেম করতে গিয়ে দেখা যায় একেকটা হাতি একেক কারনে মৃত্যুবরন করেছে । তিনি বলেন হাতিটির একটি দাঁত নেই, অপর একটি দাঁতের অংশ বিশেষ পাওয়া গেছে। এছাড়া হাতির মরদেহের পাশে লোহাসহ অন্যান্য কিছু পাওয়া গেছে এবং হাতিটির বয়স ১২-১৫ বছর হতে পারে বলে তিনি ধারনা করেন ।

জলদী অভয়ারন্য রেঞ্জ ও বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন পাহাড়ে অধিক জনবসতি গড়ে উঠায় খাদ্য স্বপ্লতার কারনে হাতি লোকালয়ে ছুটে আসছে। আর এ সুযোগে কিছু খারাপ লোক খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হাতিকে হত্যা করছে । আবার অনেক সময় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হাতিকে মারা হচ্ছে ।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, কেউ যদি অন্যায়ভাবে ভিন্ন কৌশলে হাতিকে ফাঁদ পেতে হত্যা করে তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে। আর হাতির হামলায় যারা মারা যাচ্ছে তাদের বনবিভাগ ও সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানান ।

উল্লেখ্য, এশিয়ার একমাত্র হাতির প্রজনন কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত চুনতি অভয়ারণ্য । আর এ অভয়ারণ্য বেশ কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে বাঁশখালীর পাহাড়ী জনপদ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতায় জলদী অভয়ারণ্য রেঞ্জ ও কালীপুর রেঞ্জের আওতায় ৮টি বিট অফিস রয়েছে। বাঁশখালীর জলদী, চাম্বল, নাপোড়া, পুইঁছড়ি, কালীপুর, বৈঁলছড়ির চেচুরিয়া, সাধনপুর ও পুকুরিয়া বিট অফিসের পাহাড়ী এলাকায় প্রায় সময় পাহাড়ী হাতি হানা দিয়ে বসতবাড়ি ,ফসলী জমি তছনছ ও মানুষের মৃত্যুর ঘটনা সংগঠিত হয়।

তাছাড়া চলতি বছরে জ্ঞাতভাবে ৪টি হাতির মৃত্যু এবং অজ্ঞাতসারে আরো হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। চলতি বছরে ৫ ফেব্রয়ারি সাধনপুর পাহাড়ি হাতির মৃত্যু হয় । এর পর ৩০ মার্চ সাধনপুর লটমনি পাহাড়ে এবং ২৩ মে একই ভাবে হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ গতকাল ১৩ জুন বৈলছড়ির অভ্যারখীল পাহাড়ে হাতিকে মেরে গোপনে পুতে ফেলার ঘটনা জানাজানি হলে সেখানে প্রশাসন,বনবিভাগ ও স্থানীয় সাংবাদিকেরা ঘটনা সর্ম্পকে অবহিত হয়ে সেখানে ছুটে গেলে ১৪ জুন বনবিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এ স্থান পরিদর্শন করে কিভাবে হাতিকে মারা হয়েছে সে ঘটনা তদন্ত করেন।

এছাড়া চলতি বছরে ২ ফেব্রয়ারি পুঁইছড়ির জহরলাল দেব প্রকাশ কালাবাশি (৩৫), ৬ ফেব্রয়ারি সাধনপুর এলাকার আবদুল মুবিন (৫০), ১১ মার্চ বাঁশখালী ইকোপার্ক এলাকায় শীলকুপের রিতা বড়ুয়া হাতির হামলায় মৃত্যুবরন করে।

এ বিভাগের আরও খবর
আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.